জীবনে টিকে থাকতে হলে পড়াশোনা লাগবে।
ভালো CGPA লাগবে।
একটা ভালো চাকরি লাগবে।
হয়তো আপনি এইগুলোর সবই করেছেনও। হয়তো পেয়েছেনও।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারপর?
চাকরি পাওয়ার পরে কী?
জীবনের প্রতিটা সমস্যার উত্তর কি সার্টিফিকেটে লেখা থাকে?
প্রথম দিন অফিসে গিয়ে যখন বুঝলেন, কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, কোন পরিস্থিতিতে কেমন রিঅ্যাক্ট করতে হয়—সেগুলো তো আপনি কোথাও শেখেননি।
পারিবারিক সমস্যায়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনে, অথবা হঠাৎ বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়… তখন বোঝেন, শুধু বইয়ের বিদ্যাতে সবকিছু হয় না।
আমরা অনেকেই একটা সময় বুঝে ফেলি, সফল হতে হলে শুধু বইয়ের শিক্ষাই যথেষ্ট না।
জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে দরকার এমন কিছু Survival Skill, যেগুলো আপনাকে শুধু টিকিয়ে রাখে না, বরং শক্ত করে তোলে।
এই স্কিলগুলোই আপনার চিন্তাধারা গঠন করে, সিদ্ধান্তে স্পষ্টতা আনে, এবং অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজের পথ নিজে খুঁজে নিতে সাহায্য করে।
এগুলো না থাকলে আপনি হয়ত বেঁচে থাকবেন, কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা ক্ষেত্রে ঠেকে যাবেন।
আর তাই, এই কথাগুলো মনে করিয়ে দিতেই আজকের এই লেখা।
এই পোস্টে এমন ৭টি survival skill নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা আপনি একবার রপ্ত করতে পারলে—ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনের সবকিছুতেই অনেক দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারবেন।
১. Critical Thinking – নিজে চিন্তা করার ক্ষমতা
চোখে যা দেখলেন তাই বিশ্বাস করলেন, যা শুনলেন সেটাই সত্য ধরে নিলেন, এভাবে আপনি সারভাইভ করতে পারবেন না।
Critical thinking শেখা মানে হচ্ছে, প্রতিটা তথ্য বা সিদ্ধান্তকে নিজের মতো করে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখা। সবার কথা শুনতে হবে, কিন্তু সব কথা মানতে হবে, এমন তো না।
যে আপনার ভালো চায়, তার পরামর্শও ভুল হতে পারে। অথবা সে আপনাকে সূক্ষ্মভাবে ঠকানোর জন্য এমন পরামর্শ দিচ্ছে। তাই চোখ-কান খোলা রেখে, চিন্তা করে বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
🔸 এমন উদাহরণ নিশ্চয়ই আপনার কাছে অপরিচিত নয়: ধরুন, এক আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ কেউ এসে আপনার স্বামীকে বললো—
“তোর বউকে এত সুযোগ-সুবিধা দিলে পরে মাথায় উঠে বসবে। এটা করতে দিস না, ওটা করতে দিস না।”
এখন আপনার স্বামী যদি চিন্তা না করে তার কথা ধরে বসে, তাহলে তো সম্পর্কের ভরসাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
কিন্তু একজন Critical Thinker স্বামী কী করবে?
সে ভাববে, “এই কথা যে বলছে সে আমার আপনজন হতে পারে, কিন্তু আমার বউ তো সেই মানুষ, যাকে আমি জানি, বুঝি, ভালোবাসি। আমি যদি অন্যের চিন্তা দিয়ে আমার বউকে ট্রিট করি, তাহলে আমার সাথে তার সম্পর্কটাই তো বদলে যাবে। আমি যদি তার বিশ্বাস না রাখি, তাহলে স্বামী হয়ে থাকলাম কোথায়?”
এটাই হলো Critical Thinking।
অন্যের কথা শুনে ফেলেও নিজে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
তাই প্রতিদিন যেকোনো নতুন মতামত, পরামর্শ, বা ইনফরমেশন পেলেই নিজেকে ১টা প্রশ্ন করুন,
“এর পিছনে যুক্তি কী?”, এটা কতটুকু সত্য?”
“এই তথ্যটা আমার জীবন, লক্ষ্য, সম্পর্ক বা পরিস্থিতির সাথে মেলে কিনা?”
এই অভ্যাসটা আপনাকে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে sharper ও wiser করে তুলবে।
২. Decision Making – কোন কাজটা আগে, কোনটা পরে সেটা বোঝা
সময় নেই, কাজ বেশি, এইটা এখন আমাদের সবারই রুটিন হয়ে গেছে।
কিন্তু যারা বুঝে নেয় কোনটা আগে করলে বাকিগুলো সহজ হয়ে যাবে, তারা একটা স্টেপ নিয়ে সবসময় এগিয়ে থাকে।
Decision making মানে শুধু “বেছে নেওয়া” না,
সচেতনভাবে, দ্রুত, এবং স্মার্টলি বেছে নেওয়া।
আপনি যদি একজন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার হাতে এখন একসাথে ৪টা কাজ:
– ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে
– কাল পরীক্ষা আছে, পড়া শেষ করতে হবে
– অনলাইন কোর্স মেন্টরকে ইমেইল দিতে হবে
– একটা গ্রুপ প্রেজেন্টেশন রিহার্সেল করতে হবে
এখন আপনি যদি একটার পর একটা ধরে কাজ করেন, যেটা সামনে পড়ে সেটাই আগে করেন, তাহলে আপনি বার্নআউট হয়ে যাবেন। শেষমেশ হয়তো প্রেজেন্টেশনই রিহার্সেল করা হবে, কিন্তু যদি আপনি আগে বুঝে নেন—
টেস্টের পড়াটা আগে মুখস্থ না করলে রাত জেগে কিছুই হবে না তাহলে আপনি নিজের জন্য ঠিক করতে পারবেন কোনটা “Urgent” আর কোনটা “Important”।
আবার ধরেন, আপনি একজন ওয়ার্কিং মা, সকালে আপনার অফিসে মিটিং আছে, এইদিকে আপনাকে সকালে রান্না করে যেতে হবে, বাচ্চাদের টিফিন রেডি করে দিতে হবে, আবার এইদিকে আপনার রাতে ঘুম ভালো হয়নি।
এখন আপনি যদি ঘুমের ঘোরে রান্না নিয়ে পড়ে থাকেন, এবং টিফিনে কি দিবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, তারপর বাচ্চাদের জুতো পরিষ্কার, স্কুল ব্যাগ রেডি এসব শেষ মুহূর্তে শুরু করেন, তাহলে স্ট্রেস লেভেল একদম পিকে চলে যাবে।
আর অফিসের মিটিং? সেটা চিন্তা করে তো তখন আপনার পাগল হয়ে যাবার অবস্থা হবে।
তাই আপনি আগেই মাথায় রাখেন—
বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোটা এখন সবচেয়ে Critical, তাই আগে বাচ্চাদের কাজ গুছিয়ে নেন, পরে রান্নায় মনোযোগ দিন, অথবা আজকে রান্না না করে বাহিরে থেকে খাবার অর্ডার করে আনিয়ে রাখুন।
তারপর চা খেয়ে মিটিংয়ের জন্য একটু ব্রেইন ফ্রেশ করে নেন। কারণ একদিন রান্না বাসায় না করলেও কারো ক্ষতি হবে না।
এইজন্য,
“Priority Matrix” নামের একটা এফেক্টিভ টুল ইউজ করুন।
চারটা ভাগে কাজগুলো ভাঙুন:
1️⃣ Urgent & Important
2️⃣ Not Urgent but Important
3️⃣ Urgent but Not Important
4️⃣ Neither Urgent nor Important
এরপর দিনে শুধু ৩টা Most Important Task (MIT) ঠিক করে নিন।
এই অভ্যাসটা করলে, আপনি কাজের পরিমাণ না বাড়িয়ে শুধু সঠিক Decision নিয়ে কাজ সহজ করে ফেলতে পারবেন।
সব কাজ একসাথে করা যাবে না। কিন্তু কোনটা আগে করলে অন্যগুলো সহজ হবে—সেটা বুঝে নিলে, চাপ কমে যাবে অর্ধেক।
৩. Financial Literacy — আয়/ব্যয় সম্পর্কে জানা এবং বোঝা
শুধু ইনকাম করলেই হয় না, এই টাকা কীভাবে manage করবেন, কোথায় খরচ করবেন, কীভাবে save করবেন, আর কোন জায়গায় বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে একটু নিশ্চিন্তে নিশ্বাস ফেলা যাবে, এই জ্ঞানটাই আসলে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি।
এই স্কিল আমাদের স্কুল-কলেজে শেখায় না।
কিন্তু জীবন সময় নিয়ে হাত ধরে শিখিয়ে দেয়, তাও একটু কষ্ট দিয়ে, ভুল করার মাধ্যমে।
এমন অনেকেই আছেন, যাদের ইনকাম ভালো, তবুও মাসের শেষে আবার ধার করতে হয়।
কারণ হিসাব না থাকলে খরচও থাকে বেহিসাবি।
ধরুন, আপনার আয় মাসে ৫০ হাজার টাকা।
কিন্তু মাসের শেষ দিকে এসে বাজার করার টাকাটাই নেই, কারণ সকাল-বিকেল ইমোশনালি অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস অনলাইনে অর্ডার করে ফেলা, সপ্তাহে একদিন বাহিরে খেতে যাওয়া, কিংবা বাচ্চাদের ছোট ছোট চাওয়ার জায়গায় হিসাব ছাড়া খরচ করা।
এই রকম scenario-তে খরচ কোথায় হলো সেটা ধরতেই পারবেন না।
“Money doesn’t disappear. It leaks silently.”
এই leak বন্ধ করতে হলে দরকার হিসেব রাখা। সেটা মাথায় না, খাতা কলমে বা হাতের কাছে থাকা ফোন/কম্পিউটারে।
- বাসায় একটা ফিক্সড ডায়েরি/নোটবুক রাখুন শুধুমাত্র এই বাজেট হিসাব রাখার জন্য
- প্রতি মাসের জন্য, সপ্তাহের জন্য এবং দিনের জন্য নির্দিষ্ট একটা বাজেট রাখুন
- বাজেটের মধ্যে খরচ করছেন কিনা সেটা ট্র্যাক করুন
আপনি যদি ডিভাইস নির্ভন হোন তাহলে—
- Google Sheet-এ basic খরচের হিসাব রাখুন
- Simple Budgeting App ইউজ করতে শিখুন (Play Store-এ সার্চ করলেই অনেক অপশন পাবেন।
- না বুঝলে শুরুতে Google Keep এ একটা খসড়া রাখুন)
✔ প্রত্যেক মাসে শুরুতেই একটা limit সেট করুন—
➝ “এই মাসে খাবারে এত,
কেনাকাটায় এত,
মোবাইল-নেট-ঘুরাঘুরি মিলিয়ে এত।”
হ্যাঁ, এটা boring মনে হতে পারে, কিন্তু…
“Clarity with money brings control over money.”
যখন আপনি জানবেন কোন খাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে, তখনই বুঝতে পারবেন সেই খাতে কোথায় cut করা যায়।
একটা simple rule ধরুন—
“যত ইনকাম, তার চেয়ে একটু কম খরচ করুন।”
এইভাবে চললে অল্প ইনকামেও আপনার সঞ্চয় হবে।
আর সঞ্চয় মানেই ভবিষ্যতের স্বস্তি।
এইটা শুধু টাকা জমানোর ব্যাপার না—এইটা একটা mental relief।
নিচে আপনাদের জন্য অসাধারণ একটা রিসোর্স শেয়ার করছি—
The Richest Man in Babylon এই বইটা যদি পড়েন, তাহলে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে আপনার ভিতটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি আগে থেকে পার্সোনাল ফাইন্যান্স নিয়ে একটু ধারণা থাকে তাহলে একবারেই ধরতে পারবেন। আর একেবারে নতুন কেউ হলে—২–৩ বার পড়লে বুঝে যাবেন।
আমি নিচে PDF ও রকমারির লিংক শেয়ার করছি।
আপনার সুবিধামতো ভার্সন নিয়ে বইটা শেষ করে ফেলুন।
The-Richest-Man-in-Babylon.pdf
বইটা পড়ার পর একমাস বইয়ে দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী চলুন, তারপর নিজেই নিজের উপর গর্ব করবেন। আর এটাকে যদি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেন তাহলে আপনি একসময় ইনশাআল্লাহ ধনী হয়ে যাবেন।
কারণ Financial control মানেই Self Contro আর এই স্কিলটা থাকলে আপনি অনেক দিক থেকেই ahead থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
নিচে আরও একটি সহজ বাংলা বাজেটিং শিট দিলাম যা আপনি নিজের জন্য কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করতে পারেন:
এই লিংকে ক্লিক করে কাস্টমাইজ করুন
এই ফাইলের ভিতরে আপনি আপনার মাসিক আয়, খরচ, সেভিংস ও অন্যান্য খরচ এক নজরে দেখতে পারবেন।Google Keep এ ও আপনি এটাকে কাস্টমাইজ করতে পারেন।
৪. Communication Skill – নিজের কথা বুঝিয়ে বলার দক্ষতা
আপনি যত ভালো কিছু ভাবেন না কেন, যদি সেটা অন্যকে বুঝিয়ে বলতে না পারেন—তাহলে সেটার কোনো মূল্য থাকে না।
শুধু মনে মনে আইডিয়া রাখলে হবে না, সেটা পরিষ্কারভাবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে অন্যকে বোঝাতে পারাটাও একটা স্কিল। আর এই স্কিলই আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলবে।
ধরুন, আপনি বিজনেস রিলেটেড কোনো একটা অনুষ্ঠানে একটা দারুণ আইডিয়া নিয়ে গেলেন।
কিন্তু বলার সময় ঘাবড়ে গেলেন বা শব্দ খুঁজে পেলেন না। সামনে বসে থাকা কেউ বুঝতেই পারল না আপনি কী বলতে চাইছেন।
তখন সবাই ভাববে—“এই আইডিয়া তো কাজের মনে হচ্ছে না।”
অথচ আপনি জানেন, একটু সাহস করে যদি গুছিয়ে বলতে পারতেন, তাহলে সবার মাথা ঘুরে যেত!
Just because your voice trembled doesn’t mean your idea was weak.
জাস্ট সাহসের সাথে গুছিয়ে বলতে পারেননি বলে আপনি একটা অপরচুনিটি মিস করলেন।
আবার ধরুন, আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং বা বিজনেস শুরু করতে চাইছেন।
এখন আপনি যদি ক্লায়েন্টকে নিজের সার্ভিস বোঝাতে না পারেন, ক্লায়েন্টকে ঠিকঠাক মেসেজ না দিতে পারেন, তাহলে আপনাকে কেউ হায়ার করতে চাইবে না। আপনি থাকতে আরেকজন কাজ নিয়ে যাবে, যে এই communication skill-এ এগিয়ে থাকবে।
তাই,
✔ প্রতিদিন ১-২টা আইডিয়া নিজের ভাষায় লিখে রাখুন, যেটা আপনি আজ শিখেছেন বা বুঝেছেন।
✔ Voice Note-এ নিজের কথাগুলো রেকর্ড করে শুনুন। শুনে দেখুন, আপনার কথা অন্য কেউ শুনলে বুঝতে পারবে কিনা।
✔ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ২ মিনিট নিজের ভাবনাগুলো উচ্চস্বরে বলার অভ্যাস করুন। যেমন: “আজ আমি কী শিখেছি” বা “এই সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?”
✔ বই পড়ার সময়ে আউট লাউড পড়ুন। এটা মুখের জড়তা দূর করার পাশাপাশি কনফিডেন্স বিল্ড আপ করে।
These tiny daily practices will one day give you the voice that makes rooms go silent and listen.
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আপনাকে ধীরে ধীরে Confident Communicator বানিয়ে তুলবে।
🔸 আপনি যত ট্যালেন্টেডই হোন না কেন, যদি সেটা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেটা অকেজো রয়ে যাবে।
কমিউনিকেশনের এই স্কিল যত বেশি প্র্যাকটিস করবেন, একসময় দেখবেন—শুধু ভাবনাই নয়, আপনার কণ্ঠস্বরেও পরিবর্তন আসছে। কনফিডেন্স বেড়ে যাচ্ছে, গ্রোথ আসবে তখন আকাশছোঁয়া।
কারণ, Confidence ভেতর থেকে তৈরি হয়, প্রতিদিন একটু একটু করে। কন্টিনিউয়াসলি প্র্যাকটিসের মাধ্যমে।
৫. Adaptability – বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা
সময়, পরিস্থিতি, প্রযুক্তি সবকিছুই বদলাচ্ছে।
এখন যেটা চলে, এক বছর পর সেটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে পারে। এমন সময়ে যদি আপনি আগের মতোই পেছনে পড়ে থাকেন, “আমি তো এটা জানি না”, “আমি এইভাবে অভ্যস্ত”, তাহলে আপনিই পিছিয়ে পড়বেন।
🔸 ধরুন, আপনি বছরের পর বছর Google Docs-এ কাজ করেছেন। হঠাৎ একটা ভালো জব পেলেন, আর অফিস থেকে বলা হলো Microsoft Word-এ একটা ফাইল বানিয়ে, সেটা দিয়েই PowerPoint প্রেজেন্টেশন তৈরি করে বসকে জমা দিতে হবে।
এবার আপনি থমকে গেলেন। আর কয়দিন পর যখন Excel-এ হিসাব করতে বলবে, তখন মাথা আরও ঘুরান্তি দিবে।
এখন আপনি যদি বলেন, “আমি Microsoft Word বা PowerPoint পারি না”, তাহলে হয় আপনাকে দ্রুত এই টুলগুলো শিখতে হবে, না হলে “পারিনা” বলে জব ছেড়ে দিতে হবে। আর তখনই আপনার জায়গায় আরেকজন এসে বসবে।
কিন্তু যিনি Adaptable, তিনি বলবেন,
“ওকে, Bright School এর Computer Essentials: Microsoft Office for Beginners কোর্সটা করে শিখে ফেলি।”
এই মানসিকতাটাই মানুষকে এগিয়ে রাখে।
Because every change is a new chance to learn.
শুধু টেকনোলজি না, জীবনের প্রায় প্রতিটা জায়গায় Adaptability দরকার হয়।
মনে আছে, শুরুর দিকে ChatGPT নিয়ে কত হাসাহাসি হতো? ভাগ্যিস, আমি তখন লিংকডইনে একটিভ ছিলাম, সেখান থেকেই Adapt করার সুযোগ পেয়ে গেছি।
এখন যারা শুরু থেকেই ChatGPT ইউটিলাইজ করছে, তারা Prompt Engineering-এ মাস্টার হয়ে গেছে।
তারা প্রতিদিনের কাজেই AI ব্যবহার করে স্মার্টলি এবং দ্রুততার সাথে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
আর আপনি হয়তো এখনো কপি-পেস্ট করে ভাবছেন, “এখনও তো কেউ শিখেনি!”
না, আপনি আসলে পেছনে পড়ে আছেন। আপনি যদি Adapt করতেন, তাহলে জানতেন কিভাবে কনটেন্ট এডিট করে Human tone এ আনতে হয়।
Bottom line is টেকনোলজি থেকে শুরু করে জীবনের সব জায়গাতেই Adaptability দরকার।
না হলে আপনার Growth আসবে না।
Because growth begins where comfort ends.
আপনি যত বেশি যেকোনো নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন, তত বেশি আপনি কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন, আর তখনই আসবে আপনার পার্সোনাল ব্রেকথ্রু।
✅ আপনি যদি স্টুডেন্ট হন, হঠাৎ কোর্স চেঞ্জ, টিচার বদলানো, বা নতুন লার্নিং মেথড আসলে আপনাকেই মানিয়ে নিতে হবে।
✅ আপনি যদি ওয়ার্কিং কেউ হন, নতুন রোল, নতুন বস, নতুন টিম, নতুন সফটওয়্যার, এইসবই হঠাৎ আসতে পারে। আপনাকেই Adapt করতে হবে।
✅ আর আমরা মায়েরা তো জানিই, কিভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে Adjust করে নিতে হয়।
আমি দেখেছি, যে যত বেশি Adaptable, সে তত বেশি সফল।
Adaptability প্র্যাকটিস করতে চাইলে প্রতিদিনই ছোট ছোট কিছু শেখার অভ্যাস করুন—
- প্রতি মাসে অন্তত ১টা নতুন Tool বা Platform শেখার টার্গেট নিন। যেমন: Microsoft Office Suite, Canva, Notion, Trello, ChatGPT
- YouTube, Skillshare, বা Coursera থেকে ৩০–৬০ মিনিটের Micro Course দেখুন
- বাংলায় বা হিন্দিতেও অনেক ভালো টিউটোরিয়াল আছে—নিজের মতো করে শিখে নিন
- নতুন কিছু দেখলেই ভয় পাবেন না। নিজেকে বলুন—
“Let’s learn it now, so it helps later. I can do it.”
তাই লাইফে হঠাৎ কোনো চেইঞ্জ আসলেই বলুন—Let’s explore it.
কারণ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতাই এখনকার দিনে সবচেয়ে বড় স্কিল।
আপনার Comfort Zone-এর একটু বাইরে গিয়ে, নতুন কিছু শেখা দিয়েই Adaptability তৈরি করুন।
Because the more adaptable you are, the more unstoppable you become.
৬. Emotional Regulation – নিজের ইমোশনকে নিজের কন্ট্রোলে রাখা
রাগ, হতাশা, ভয়, লজ্জা—এই অনুভূতিগুলো আমরা সবাই অনুভব করি। কিন্তু সবাই এই ইমোশনগুলো সামাল দিতে পারে না। যার নিজের ইমোশনের উপর কন্ট্রোল থাকে, সেই মানুষটাই আসলে নিজের জীবনের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারে।
আমাদের লাইফে প্রতিদিন আমরা পজেটিভ ইমোশনের পাশাপাশি নেগেটিভ ইমোশনের ট্রিগার পেয়ে থাকি বেশি।
🔸 এই যেমন ধরুন, আপনি সকালবেলা কাজ করতে বসেছেন। হঠাৎ কেউ খোঁচা দিয়ে বলল,
“তুমি তো এসব কিছু পারো না।”
এখন আপনি যদি সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠেন, নিজের রাগে নিজেই জ্বলে যান, তাহলে সে মানুষটা জিতে গেল। Because he succeeded in triggering your mind.
সে আসলে চায় না আপনি গ্রো করুন।
সে হয়তো নিজেই সুপিরিয়র কমপ্লেক্সে ভুগছে, তাই আপনাকে ছোট করে সে মানসিক শান্তি পায়।
এই মুহূর্তে যদি আপনি কুল থাকেন, একটু চুপ থেকে মানুষটাকে Observe করেন, তাহলে তার শরীরজুড়ে ঘুরে বেড়ানো অহংকারের দুর্দশা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। তখন আর রাগ নয়, বরং আপনার মনে আসবে দয়া।
অথবা আপনি যদি কিছু না বলে একটু সময় নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে বলেন,
“আচ্ছা, আপনার মতামত শুনলাম।” তাহলে সে দ্বিতীয়বার বলার সাহস পাবে না।
এটা মানে এই নয় যে আপনি তার অহংকার এক্সেপ্ট করছেন, বরং আপনি তাকে হারিয়ে দিয়ে নিজের ফোকাস বজায় রাখলেন, কারণ আপনি জানেন your own capability।
Emotional Regulation শেখার জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন—
- রাগ বা হতাশা আসার পর সাথে সাথে React না করে ৫ সেকেন্ড Pause নিন।
- মাইন্ড অন্যদিকে শিফট করুন। যে পরিস্থিতি আপনাকে উত্তেজিত করছে, সেখান থেকে একটু Mentally Disconnect হন।
- প্রতিদিন রাতে ৫ মিনিট Journaling করুন—
– “আজ আমি কখন আবেগে/হতাশায় ভেসে গিয়েছিলাম?”
– “তখন কীভাবে Calm থাকতে পারতাম?”
এগুলো Self Awareness বাড়াবে।
আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন—
কেউ কিছু বললেই সেটা বিশ্বাস করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি যদি সেটা বিশ্বাস না করেন, তাহলে তার কথার আপনার উপর কোনো ক্ষমতা নেই। সবকিছু নিয়ে কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই।
সব মানুষ আপনাকে কষ্ট দেয়ার যোগ্যতা রাখে না।
তাদের জোর করে দেয়া কষ্টকে পাত্তা দিবেন না।
প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিন—
“Too Less Shall Go.” এটাই আপনার Emotional Strength বাড়াবে।
আপনার IQ যত ভালোই হোক, যদি EQ (Emotional Quotient) না থাকে,
তাহলে আপনি নিজেকে সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারবেন না।
যে মানুষ নিজের ইমোশন নিজেই ম্যানেজ করতে পারে,
সে মানুষের সামনে কেউ সহজে দাঁড়াতে পারে না।
৭. Problem Solving – সমস্যা না এড়ানো, বরং সমাধান খোঁজা
জীবনে সমস্যার অভাব নেই। সেটা হোক কাজে, সংসারে, পড়াশোনায় বা সম্পর্কেও। কেউ পড়াশোনায় মন বসাতে পারছেন না, কারো ক্লায়েন্টের মন মতো কাজ হচ্ছে না, কখনো বাচ্চা ঠিকমতো পড়তে চাইলো না, আবার কখনো নিজের কোনো সিদ্ধান্তে নিজেই কনফিউশনে পড়ে গেলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—
আপনি কি ওই সমস্যাটাকে নিয়ে শুধু মন খারাপ করবেন, না কি মাথা ঠান্ডা করে সমাধান খুঁজবেন?
আপনার ক্লায়েন্টকে সাবমিট করা কাজ যদি তার পছন্দ না হয় এবং সে বলে, “এই ডিজাইনটা আমার একদমই পছন্দ হয়নি।”
তখন আপনি যদি ভাবেন,
“আমি কি এতটাই খারাপ ডিজাইন করেছি?” কেন উনি রিজেক্ট করে দিলেন? তাহলে হতাশা আপনাকে গিলে ফেলবে।
বরং আপনি যদি বলেন,
“আচ্ছা দেখি, কোন জায়গায় ঠিক হয়নি? ওনার রেফারেন্স কী ছিল? কনসেপ্ট ঠিক বুঝেছি কিনা?”
তাহলেই আপনি একজন প্র্যাক্টিক্যাল Problem Solver হলেন। পুনরায় নতুন উদ্যমে ক্লায়েন্টকে কাজ জমা দিলেন।
অনেক সময় আমাদের এমন হয়না, সকালে রান্না শেষ হয়না, এইদিকে বাচ্চার স্কুলের দেরি হয়ে গেছে,
বা আপনি অফিসের জন্য দেরি করে ফেলেছেন। এখন রেগে গিয়ে চিৎকার করলে কিছুই হবে না।
বরং আপনি যদি বলেন,
“আগামীকাল কী করলে এই সমস্যা কমবে?”
– আগের রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখবো
– রান্নার কাটাকুটি আগে করে রাখবো
– আগামীকাল আরও ভোরে উঠে যাবো
এই ছোট সমাধানগুলোই আপনাকে আগামীকাল রিলাক্স রাখবে।
তাই, যখনই কোনো সমস্যা সামনে আসে, সাথে সাথে একটু বসে ভাবুন। অথবা নোটবুকে বা মোবাইলের নোটে লিখে ফেলুন, “এই সমস্যার সম্ভাব্য ৩টা সমাধান কী হতে পারে?”
তিনটার মধ্য থেকে যেটা সবচেয়ে সহজ, সেটাই আগে ট্রাই করুন।
প্রতিটা সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখুন, ব্যর্থতা হিসেবে না।
মনে মনে সাহস করে বলুন “This is fixable. আমি পারবো।”
ভুল হয়েছে মানেই আপনি খারাপ বা আপনি পারেন না, এমন নয়। এর মানে আপনি শিখছেন।
Problem solving is not about always being right, it’s about being willing to try again, smarter.
সমস্যা মানুষকে থামিয়ে দেয় না। কিন্তু নিজের চিন্তা যদি stuck হয়ে যায়, তবেই আপনি থেমে যান।
যে মানুষ যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে জানে, সে মানুষের পথ কেউ রোধ করতে পারে না।
তাই আজ থেকে সিদ্ধান্ত নিন, সমস্যা এলে ভয় পাবো না, বসে থাকবো না।
সমাধানের রাস্তা খুঁজবো, আর একটা করে চেষ্টা করবো।
কারণ, “প্রতিটা বড় অর্জনের পেছনে থাকে অনেক ছোট সমাধানের গল্প।
এই ৭টি survival skill জীবনের এমন দিকগুলোতে সাহায্য করে,
যেটা একাডেমিকভাবে শেখা যায় না।
আপনার প্রফেশন, পার্সোনাল লাইফ, মেন্টাল হেলথ সব জায়গাতেই এই স্কিলগুলো কাজে লাগে।
“ডিগ্রি আপনার পরিচয় হতে পারে,
কিন্তু সফট স্কিল গুলো আপনাকে টিকিয়ে রাখে সামনে এগিয়ে যেতে।”
📌 এখন একটু ভেবে দেখুন—
এই ৭টা স্কিলের মধ্যে কোনটা আপনার সবচেয়ে দরকারি বলে মনে হয়?
এই সপ্তাহে সেটাই একটা challenge হিসেবে নিন।
৭ দিন পর নিজেই টের পাবেন, আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও সক্ষম।
Discipline, practice আর ধৈর্য এই তিনটা স্কিল থাকলে বুঝবেন, আপনার মধ্যেই আছে সব survival tool।
🔸 এখন বলুন তো—
আপনি কোন স্কিলটা দিয়ে শুরু করতে চান?
(এত বড় লেখা কে কে পড়েছেন একটু জানাবেন। আপনাদের patience এর জন্য থ্যাংকস দিতে চাই।)
অনেক ইনফরমেশন জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।